পদার্থ বিজ্ঞান নিউটনের গতিসূত্র
Newton’s Laws of Motion
স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭)
স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৮৭ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ “ন্যাচারালিস ফিলোসোফিয়া প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা”তে বস্তুর ভর, গতি ও বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন৷ এ তিনটি সূত্র নিউটনের গতি সূত্র নামে পরিচিত৷
প্রথম সূত্র : বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে অর্থাৎ সমদ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে৷
দ্বিতীয় সূত্র : বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে৷
তৃতীয় সূত্র : প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে৷
নিউটনের প্রথম গতি সূত্র
Newton’s First Law of Motion
সূত্রঃ বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে অর্থাৎ সমদ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে৷
সংক্ষেপে বলা যায়, বাহ্যিক কোনও বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষমদ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে৷
এ সূত্রকে অনেক সময় জড়তার সূত্র বলা হয়৷ নিউটনের গতির প্রথম সূত্র হতে দুটি বিষয়ের ধারণা পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে জড়তা এবং অপরটি বল।
জড়তার ধারণাঃ
প্রথম সূত্র থেকে আমরা দেখতে পাই প্রত্যেক বস্তুই যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায় অর্থাৎ, বস্ত স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে দেখা যাচ্ছে বস্তুর এ স্থিতিশীল ও গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে বল প্রয়োগ করতে হবে৷ পদার্থের নিজস্ব অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাই জড়তা। জড়তাকে তাই এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়: পদার্থ যে অবস্থায় আছে চিরকাল সে অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সে অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে জড়তা বলে৷ স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে স্থিতি জড়তা এবং গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা একই গতি অক্ষুন্ন রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলা হয়।
বলের ধারণাঃ
নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো বস্তু নিজের থেকে তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না৷ কোনো বস্তু স্থির থাকলে চিরকাল স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে চিরকাল সুষম দ্রুতিতে সরলপথে চলতে চায়। তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য বাহির থেকে একটা কিছু প্রয়োগ করতে হয়৷ যা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য করে বা করতে চায় তাকেই আমরা বল বলে অভিহিত করি৷ তাই নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে আমরা বলের গুণগত সংজ্ঞা পাই৷ নিউটনের প্রথম সূত্রানুসারে, যা স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় বা গতিশীল বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাকে বল বলে।
নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র
Newton’s Second Law of Motion
সূত্র: বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে৷
ভরবেগ বা রৈখিক ভরবেগঃ
ধরা যাক, দুটি বস্তু ধাক্কা খেল। “ধাক্কার পর বস্তুগুলো কোন্ দিকে যাবে?”- এটি কিসের দ্বারা নির্ধারিত হবে? তাদের ভর দ্বারা? তাদের বেগ দ্বারা? কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ- ভর না বেগ? বস্তুগুলো কোন দিকে যাবে- কীভাবে তা নির্ণয় কর হয়? এ সকল প্রশ্নের জবাবের জন্য ভরবেগের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, একটি গতিশীল ক্রিকেট বলকে থামানোর চেয়ে একটি গতিশীল-ট্রাককে থামানো অনেক কঠিন৷ কোনে গতিশীল বস্তুকে আমরা যদি থামাতে চাই তাহলে আমরা যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই তার একটি পরিমাপ হছে ভরবেগ৷ ভরবেগ হচ্ছে বস্তুর একটি ধর্ম যা বস্তুর ভর এবং বেগের সাথে সম্পর্কিত৷ বস্তুর ভর যত বেশি হবে এবং বস্তু যত দ্রুত চলবে তার ভরবেগও তত বেশি হবে।
সংজ্ঞা: বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকে ভরবেগ বলে।
কোনো বস্তুর ভর m এবং বেগ v হলে তার ভরবেগ p,
=> p = mv
নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র
Newton’s Third Law of Motion
সূত্র : প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে৷
নিউটনের প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র হচ্ছে একটি মাত্র বস্তু সম্পর্কে, অপরপক্ষে তৃতীয় সূত্র দুটি বস্তুর সাথে সম্পর্কিত৷ ধরা যাক, a ও b দুটি বস্তু পরস্পরের ওপর বল প্রয়োগ করেছে।
ধরা যাক, a বস্তুটি b বস্তুটির উপর F1 বল এবং b বস্তুটি a বস্তুর উপর F2 বল প্রয়োগ করছে। তাহলে, নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী আমরা পাই,
F2 = -F1
প্রকৃতিতে বলসমূহ জোড়ায় জোড়ায় বিরাজ করে৷ একটি একক বলের কোনো অস্তিত্ব নেই৷
F1 এবং F2 বল দুটিকে অনেক সময় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জোড় বলা হয়৷ একটি বলকে বলা হয় ক্রিয়া বল, অপর বলকে বলা হয় প্রতিক্রিয়া বল৷ কোন্ বলটি ক্রিয়া আর কোনটি প্রতিক্রিয়া সেটা কোনো ব্যাপার নয়৷ যে কোনো একটি ক্রিয়া হলেই অপরটি প্রতিক্রিয়া হবে৷ নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র প্রকৃতিতে বিরাজমান বলগুলোর মধ্যকার প্রতিসাম্য উন্মোচন করে৷
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সবসময়ই দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে- কখনোই একই বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে না৷ প্রতিক্রিয়া বলটি ততক্ষণই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রিয়া বলটি থাকবে৷ ক্রিয়া থেমে গেলে প্রতিক্রিয়াও খেমে যাবে৷ এই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, বস্তুগুলোর সাম্যাবস্থায় বা গতিশীল অবস্থায় থাকা বা একে অপরের সংস্পর্শে থাকা বা না থাকার ওপর নির্ভরশীল নয়- সর্বত্রই বর্তমান খাকে৷