বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
পিডিএফ ডাউনলোড
বাগর্থতত্ত
অর্থ পরিবর্তন
বাগর্থ (বাক+অর্থ) একটি সন্ধিজাত শব্দ। বাক বা শব্দের অর্থই বাগর্থ। একটি শব্দে আভিধানিক অর্থ থাকলেও সেই অর্থের বাইরেও নানা অর্থ প্রকাশ পেতে পারে। যদি কেউ বলে, চলার সময় চোখ কান খোলা রেখো। এখানে শরীরের সাথে যে ‘চোখ বা কান’ থাকে তার কথা না বলে সজাগ বা সচেতন থাকার কথা বলা হয়েছে। বাগর্থ ও শব্দার্থ একে অন্যের পরিপূরক। শব্দের অর্থবিচার, অর্থের বিভিন্ন দিক, তার পরিবর্তন, প্রসার ও সংকোচন ইত্যাদি বিচারের যে বিজ্ঞান তাকেই বাগর্থ বলে। তবে এই অর্থ সাধারণ বা আক্ষরিক অর্থ বুঝিয়ে থাকে। কারণ আক্ষরিক অর্থ প্রকাশিত হলেই অন্যান্য অর্থ প্রকাশিত হবে। যদি কথা শব্দের অর্থ গূঢ় হয় তাহলেও এর আক্ষরিক অর্থ অগ্রাহ্য করার উপায় থাকে না।
ঐতিহাসিক শ্রেণিবিভাগ
বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ স্থায়ী আসন নিয়েছে সেসব শব্দ কালক্রমে অর্থও পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণত অর্থকে কেন্দ্র করেই কিন্তু এই পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বাগর্থ জ্ঞিানীরা তিনটি অর্থপরিবর্তনের কথা বলেছেন। কোন কোন অর্থ নির্দিষ্ট অভিধানে গৃহীত বা আভিধানিক। এসব শব্দকে মুখ্যার্থ আর অন্যদিকে মুখ্যার্থ থেকে জাত আলংকারিক বিশিষ্টার্থক শব্দকে বলা হয় গৌণার্থ। বিশেষ বিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসব শব্দ বদলে যায়। তিনটি কারণে, ‘অর্থপ্রসার, অর্থসংকোচন, অর্থবদল বা অর্থসংক্রম হয়’। এছাড়া অর্থালংকার অনুসারেও শব্দের অর্থ পরিবর্তন হতে পারে। যেমন :
১. শব্দের অর্থপ্রসার বা উৎকর্ষ বা উন্নতি
যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও সম্প্রসারিত রূপ এক নয় তাদের শব্দের অর্থপ্রসার বা উৎকর্ষ বা উন্নতি বলে। রূপক বা অতিশয়োক্তির ফলে কখনো কখনো অর্থের বিস্তৃতি ঘটে। এখানে ক্ষুদ্র অর্থ থেকে অর্থের বিস্তৃতি ঘটে। যেমন :
শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সম্প্রসারিত অর্থ | শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সম্প্রসারিত রূপ |
গুন | গরুর নাড়িভুড়ি বা তাঁত | দড়ি | ইতিকথা | অর্থশূন্য বাক্য | ইতিহাস |
অপরূপ | কদাকার | অপূর্ব সুন্দর | পরশ্ব | আগামিকালের পরদিন | আগামিকালের পরদিন |
অদৃষ্ট | অদেখা | ভাগ্য/নিয়তি | মন্দির | গৃহ | দেবতার আলয় |
অভিষেক | স্নান | উচ্চপদে আসিন | ধ্যান | চিন্তা | পরমার্থ চিন্তা |
দরিয়া | নদী | সমুদ্র | গাঙ | গঙ্গা | যে কোন নদী |
২. শব্দের অর্থসংকোচ বা অপকর্ষ বা অবনতি
যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও সংকোচিত রূপ এক নয় তাদের শব্দের অর্থসংকোচ বা অপকর্ষ বা অবনতি বলে। শব্দের বিভিন্ন অর্থের মধ্যে কোন একটি মুখ্য হয়ে উঠলে অন্যান্য অর্থের বিলুপ্ত ঘটলে অর্থসংকোচ হয়। এখানে বিস্তৃত অর্থ থেকে ক্ষুদ্র অর্থ ঘটে। যেমন :
শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সম্প্রসারিত অর্থ | শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সংকোচিত রূপ |
বুয়া | দাদি, নানি | কাজের মহিলা | কীর্তিকলাপ | নানা সুখ্যাতি | অপকীর্তিসমূহ |
মহাজন | মহৎজন | সুদখোর | মুর্গ | যে কোন পাখি | মোরগ |
ঝি | কন্যা/মেয়ে | কাজের মেয়ে/দাসী | অন্ন | যে কোন খাদ্য | ভাত |
মৃগ | যে কোন পশু | হরিণ | Meat | যে কোন খাদ্য | মাংস |
উজবুক | উজবেকের অধিবাসী | নির্বোধ/বোকা/মূর্খ |
৩. শব্দের অর্থবদল বা অর্থসংক্রম
যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও সংক্রমিতরূপ এক নয় তাদের শব্দের অর্থবদল বা অর্থসংক্রম বলে। অর্থের প্রসার ও সংকোচনের ফলে কখনো কখনো কোন কোন শব্দের এমন অর্থ তৈরি হয়ে যায় যখন তাদের সঙ্গে মূল অর্থের সংযোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে তাদের অর্থবদল বা অর্থসংক্রম বলা হয়। যেমন:
শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সম্প্রসারিত অর্থ | শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সংক্রমিত রূপ |
ঘর্ম | গরম | ঘাম | পাষণ্ড | ধর্মসম্প্রদায় | নিষ্ঠুর |
পাত্র | পানাধার | বর | অনটন | গতিহীন | অভাব |
world | প্রাচীন মানুষ | পৃথিবী | অবকাশ | ফাঁক | অবসর |
শুশ্রূষা | জানার ইচ্ছা | সেবা | অমূলক | মূলহীন | কাল্পনিক |
৪. শব্দের অর্থালংকার
যেসব শব্দের মূল বা পূর্বরূপ ও অলংকৃত রূপ এক নয় তাদের শব্দের অর্থালংকার বলে। অর্থালংকার অর্থাৎ উপমা ও রূপক অলংকারের সাহায্যেও অনেক সময় শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয়। যেমন:
শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | সম্প্রসারিত অর্থ | শব্দ | মূল বা পূর্বরূপ | অলংকৃত রূপ |
শ্বাপদ | যার পা কুকুরের মত | শিকারি পশু | গো | গরুর চোখ | জানালা |
উদ্বেল | বেলাভূমি | ব্যাকুল | স্তম্ভিত | স্তম্ভাকৃতি | বিস্মিত |
দারুণ | কাষ্ঠ নির্মিত | অত্যন্ত | পেট | কলসি/বস্তা | উদর |
গোষ্ঠী | যেখানে গরু থাকে | সমষ্টি |
ব্যঞ্জনার্থ
শব্দের গূঢ়ার্থ প্রকাশক গুণকেই ব্যঞ্জনার্থ বলে। এখানে শব্দের অর্থ বা বাক্যের ব্যঞ্জনার্থের দ্যোতনা থাকতে পারে। আসলে ব্যঞ্জনার সঙ্গে অভিব্যক্তিই ব্যঞ্জনার্থ। এখানে শব্দের অর্থ মুখ্যার্থ অথবা লক্ষার্থ না ধরে তাকে অতিক্রম করে যে অর্থ তাই ব্যঞ্জনার্থ। অর্থপ্রকাশের দিক দিয়ে ব্যঞ্জনার্থ দুই প্রকার। যেমন:
ক) অভিধা বা সরল ব্যঞ্জনার্থ
যা সরলভাবে বলা হচ্ছে তাই হলে হবে অভিধা বা সরল অর্থ। একটি শব্দের একাধিক অর্থ থেকে অধিক ব্যবহৃত একটি শব্দকে অভিধা বা প্রসিদ্ধ অর্থ বা সরল অর্থ বলে। যেমন: ‘করী’ অর্থ ‘যার হাত আছে বুঝালেও’ ‘হাতি’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। একে ব্যাচার্থও বলে। একে অভিধা শক্তিও বলে। কারণ এখানে যেসব শব্দের অর্থ সাধারণভাবে বুঝা যায় শুধু সেসব শব্দই এপর্যায়ে পরে। যেমন: মানুষ, গরু, ছাগল, গাছ, বই, আকাশ ইত্যাদি। শব্দে ব্যুৎপত্তির ব্যবহারিক অর্থের উপর নির্ভর করে অভিধা বা সরল ব্যঞ্জনার্থ তিন প্রকার। যেমন:
১. যোগশব্দ
ব্যুৎপত্তির ব্যবহারিক অর্থের দিক দিয়ে একই অর্থবোধক শব্দকে যোগশব্দ বলে। ব্যুৎপত্তি অর্থ বিশেষভাবে উৎপত্তি। যেমন:
শব্দ ব্যুৎপত্তি অর্থ ব্যবহারিক অর্থ
চালক যে চালায় যে চালায়
২. রূঢ়শব্দ
ব্যুৎপত্তির অন্তর্গত অনেকগুলো শব্দ থেকে ব্যবহারিক একটি অর্থপ্রকাশক শব্দকে রূঢ়শব্দ বলে। অথবা যেসব শব্দ ব্যুৎপত্তিগত অর্থ না বুঝিয়ে বিশেষ কোন অর্থ প্রকাশ করে তাদের রূঢ়শব্দ বলে। অথবা সমস্যমান পদের অনুগামি না হয়ে বিশেষ কোন অর্থ প্রকাশ করে তাদের রূঢ়শব্দ বলে। যেমন:
শব্দ ব্যুৎপত্তি অর্থ ব্যবহারিক অর্থ
পঙ্কজ (যা পঙ্কে বা কাঁদায় জন্মে) শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল পদ্মফুল
জলধি (যা জল ধারণ করে) নদী, বিল, পুকুর, সাগর সাগর
জলদ যে জল দেয় মেঘ
সম্বন্ধী যার সঙ্গে সম্বন্ধ আছে স্ত্রীর বড় ভাই
৩. রূঢ়িশব্দ
যেসব শব্দ ব্যুৎপত্তিগত অর্থ অগ্রাহ্য করে বিশেষ কোন অর্থ প্রকাশ করে তাদের রূঢ়িশব্দ বলে। যেমন:
শব্দ | ব্যুৎপত্তি অর্থ | ব্যবহারিক অর্থ | শব্দ | ব্যুৎপত্তি অর্থ | ব্যবহারিক অর্থ |
বাঁশি | বাঁশের তৈরি বস্তু | যে কোন বাদ্যযন্ত্র | তৈল | তিলজাত | যে কোন স্নেহ পদার্থ |
শুশ্রূষা | শোনার ইচ্ছা | সেবা | সন্দেশ | খবর | মিষ্টান্ন বিশেষ |
মিছরি | মিশরের জিনিস | মিষ্টি দ্রব্য | গবেষণা | গরু খোঁজা | ব্যাপক অধ্যয়ন |
চিনি | চীন দেশে তৈরি মিষ্টি | দ্রব্য | গোধূলি | গরুর পায়ের ধূলি | সন্ধ্যাবেলা |
মণ্ডপ | যে মণ্ড পান করে | ছাউনি | সম্ভ্রম | ভয় | সম্মান |
পাষণ্ড | ধর্ম সম্প্রদায় | নির্দয় ব্যক্তি | হরিণ | যে হরণ করে | এক জাতীয় পশু |
ব্যাঘ্র | যে বিশেষভাবে ঘ্রাণ নেয় | বাঘ | গোষ্ঠী | গরুর পাল | সমষ্টি |
হস্তী | যার হস্ত আছে | হাতি | পানজাবি | পানজাবের অধিবাসি | জামা বিশেষ |
প্রবীণ | প্রকৃষ্ট বীণা বাদক | প্রবীণ ব্যক্তি | আনাজ | শস্য | কলা বিশেষ |
খ) তির্যক ব্যঞ্জনার্থ
সরলভাবে না বুঝিয়ে অন্য অর্থ প্রকাশক শব্দ বা বাক্যকে তির্যক ব্যঞ্জনার্থ বলে। অর্থাৎ কথার উত্তরটা সোজা না হয়ে বাঁকা বা একাধিক বার হয়। যেমন: তুমি খেয়েছ? এখানে বক্তা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর দিতে পারে। আবার এমনও হতে পারে তাকে খাবার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এখানে একের অধিক বুঝ আসতে পারে। একই বাক্যের মাধ্যমে বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ পেতে পারে। অর্থপ্রকাশ বা বাগর্থ প্রকাশ অনেকটাই আক্ষরিক কাজ। সহজ অর্থপ্রকাশ হলো যা বলা বা বোঝানো হচ্ছে মোটামুটি তাই। এটি যদি আক্ষরিকভাবে না বোঝায় তাহলে তির্যক ব্যঞ্জনার্থ হয়।
‘দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দাও’ কখন নির্দোষ অনুরোধ আর কখন অপমানমূলক ঘাড়ধাক্কার বাক্যরূপ তা বোঝাবার জন্য যে যুক্তিবিচার এবং নৈয়ায়িক জিজ্ঞাসা দরকার তা বিদেশি কেনো ভাষার বক্তাও সঙ্গে সঙ্গে বুঝে উঠতে পারেন না।
বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
শুদ্ধ বলা বা লেখা সৃজনশীল কাজ। আর এই শুদ্ধ বলা বা লেখা নির্ভর করে ব্যাকরণের ওপর। ব্যাকরণ ভাষাকে সুন্দর, মার্জিত ও শৃংখলাবদ্ধ করতে সাহায্য করে। তাই ব্যাকরণকে ভাষার সংবিধান বলে। ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগের মাধ্যমেই বাংলা ভাষাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। বাংলা ভাষাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়, শুদ্ধ বলে বা লেখে। ব্যাকরণজ্ঞান থাকলে ভাষার অশুদ্ধ প্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ অর্থাৎ অপপ্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়।
ভাষা অপপ্রয়োগের ক্ষেত্র
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাষার অপপ্রয়োগ হতে পারে। যেমন:
১. শব্দ রূপান্তজাত অপপ্রয়োগ: দৈন্যতা, মাধুর্যতা, সমসাময়িক, উদ্ধেলিত, চোখের দৃষ্টিশক্তি, মাতাহারা।
২. শব্দদ্বিত্ব অপপ্রয়োগ : শুধু/কেমলমাত্র, অশ্রুজল, ঘামজল, ভুলত্রুটি, ভুলভ্রান্তি।
৩. সংখ্যাজাত অপপ্রয়োগ : ১ জুলাই/১লা জুলাই।
৪. বচনজাত অপপ্রয়োগ : বড় বড় মানুষরা সব, সকল/সমস্ত /সব যুদ্ধাপরাধীদের।
৫. নির্দেশকজাত অপপ্রয়োগ : এই লোকটি।
৬. সন্ধিজাত অপপ্রয়োগ : লজ্জাস্কর, ইতিমধ্যে, উল্লেখিত, দুরাবস্থা।
৭. সমাসজাত অপপ্রয়োগ : দেশ ও বিদেশে।
৮. উপসর্গজাত অপপ্রয়োগ : সুস্বাগতম, অক্লান্তি হীনভাবে, উপ-পরিচালক।
৯. বিভক্তিজাত অপপ্রয়োগ : আমাদেরকে, তাদেরকে, নারীদেরকে, বাড়িতে।
১০. প্রত্যয়জাত অপপ্রয়োগ : দৈন্যতা, দারিদ্রতা।
১১. চিহ্নজাত অপপ্রয়োগ : সুন্দরী বালিকা, আসমা অস্থিরা, অভাগিনী, কাঙালিনী।
১২. পক্ষজাত অপপ্রয়োগ : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না।
১৩. কারকজাত অপপ্রয়োগ : ছুরিতে, আমের কাননে।
১৪. বিসর্গজাত অপপ্রয়োগ : পুন:প্রচার।
১৫. সমোচ্চারিত অপপ্রয়োগ : তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে।
১৬. বাক্যজাত অপপ্রয়োগ : আমি স্বচক্ষে/নিজের চোখে।
১৭. বাচ্যজাত অপপ্রয়োগ : সূর্য পূর্বদিকে উদয় হয়।
১৮. এককথায় প্রকাশ অপপ্রয়োগ : চারিদিকে প্রদক্ষিণ, হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা।
১৯. প্রবাদ অপপ্রয়োগ : স্বল্প বিদ্যা ভয়ংকরী।
২০. বাগধারা অপপ্রয়োগ : পাকা ধানে আগুন দেয়া।
২১. বানান ও উচ্চারণ অপপ্রয়োগ : প্রাণীজগৎ, কীভাবে, পৃথিবীব্যাপী, স্ত্রীবাচক, শশীভূষণ, মন্ত্রীসভা, স্বামীগৃহ, গুণীজন, নদীতীর, নদীমাতৃক, বৈশাখীমেলা, আগামীকাল। সমাসবদ্ধ শব্দের বানান লেখা হয় ঈ-কার দিয়ে। ব্যাকরণ নিয়ম অনুসারে ঈ-কার হয়ে যায় ই-কার। ঊ-কার হয়ে যায় উ-কার। ণ-হয়ে যায় ন। য-ফলা থাকে না। যেমন: ঘরনি, কানাই/কানু, বোশেখি, সুয্যি, সোনা, সন্ধে ইত্যাদি। প্রাদেশিক ও বিদেশি শব্দ হলে /ছ/য/ণ/ষ/ঞ্জ/ঞ্চ/ ঈ-কার/উ-কার বসে না তবুও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন: লুংগি, ডেংগু, ঠান্ডা, ঝান্ডা, লন্ঠন, মিসরি, পসন্দ, নামাজ, ওজু, ইস্টার্ন, স্টোর, ইনজিন, ইনজিনিয়ার, সেনচুরি, তির (ধনুক অর্থে, পাড় অর্থে নয়), অ্যাকাডেমি/এ্যাকাডেমি/একাডেমি, রসুল, নুর ইত্যাদি। সংস্কৃতশব্দে য-ফলা চল আছে কিন্তু ইংরেজি শব্দে নাই তবু লেখা হচ্ছে। যেমন: ইস্যু, টিস্যু, গ্যেটে, স্যার। ইংরেজি শব্দকে তদ্ভব করে লেখা হচ্ছে। যেমন: হসপিটাল>হাসাপাতাল, চকোলেট>চকলেট।
শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
সংস্কৃত সহিত থেকে ‘সঙ্গে বা সাথে’র উৎপত্তি। নিয়ম আছে গদ্যে ‘সঙ্গে’ আর পদ্যে ‘সাথে’ ব্যবহার করতে হবে তবে এখন সর্বত্রই ‘সঙ্গে’ ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার বিশেষণ সাধারণত পদক্রম অনুসারে বিশেষ্যের আগে বসে। যেমন: খাঁটি গরুর দুধ। ‘কী খাঁটি’ প্রশ্ন করলে পাওয়া যায় গরুর দুধ (সংস্কৃত গোদুগ্ধ)। অনেকেই বর্তমানে এই বাক্যকে ভুল মনে করে শুদ্ধ করে লেখেন গরুর খাঁটি দুধ। ইংরেজিতে লেখা হয় Fresh/Pure Milk অর্থাৎ খাঁটি দুধ। লেখা হয় না Fresh /Pure Cow Milk। সাধারণত গরুর দুধই বিক্রি হয় অন্য দুধ নয়। তাই গরুর খাঁটি লেখার প্রয়োজন হয় না। খাঁটি দুধ—লেখলেই হয়। বিভিন্নভাবে বাক্য অুশুদ্ধ হতে পারে। যেমন :
অশুদ্ধবাক্য : রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠতম/তর।
শুদ্ধবাক্য : রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠ।
অশুদ্ধবাক্য : আপনি সদাসর্বদা জনগণের মঙ্গল চেয়েছেন।
শুদ্ধবাক্য : আপনি সর্বদা/সব সময় জনগণের মঙ্গল চেয়েছেন।
অশুদ্ধবাক্য : শুনেছি আপনি স্বস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন।
শুদ্ধবাক্য : শুনেছি আপনি সস্ত্রীক/স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকেন।
অশুদ্ধবাক্য : আপনি জনগণের হয়েও তাদের পক্ষে সাক্ষী দেননি।
শুদ্ধবাক্য : আপনি জনগণের হয়েও তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেননি।
অশুদ্ধবাক্য : ঘটনাটি শুনে আপনি তো উদ্বেলিত হয়ে পড়েছিলেন।
শুদ্ধবাক্য : ঘটনাটি শুনে আপনি তো উদ্বেল হয়েছিলেন।
অশুদ্ধবাক্য : বাসের ধাক্কায় তিনি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
শুদ্ধবাক্য : বাসের ধাক্কায় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
অশুদ্ধবাক্য : আপনার এলাকার উন্নয়নের জন্য আপনি দিবারাত্রি পরিশ্রম করেছেন।
শুদ্ধবাক্য : আপনার এলাকার উন্নয়নের জন্য আপনি দিবারাত্র/দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।
অশুদ্ধবাক্য : আমাদের প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেছেন নর-নারীর বৈষম্যতা দূর করতে।
শুদ্ধবাক্য : আমাদের প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেছেন নর-নারীর বৈষম্য দূর করতে।
অশুদ্ধবাক্য : শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
শুদ্ধবাক্য : শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষ/উৎকৃষ্টতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
অশুদ্ধবাক্য : বেশি চাতুর্যতা দেখাতে গিয়ে শেষে নিজেই দল থেকে বাদ পড়লেন।
শুদ্ধবাক্য : বেশি চাতুর্য/চতুরতা দেখাতে গিয়ে শেষে নিজেই দল থেকে বাদ পড়লেন।
অশুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্যতা নাই।
শুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্য বা মধুরতা নাই।
অশুদ্ধবাক্য : ঢাকা দিন দিন তার ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলছে।
শুদ্ধবাক্য : ঢাকা দিন দিন তার ভারসাম্য/ভারসমতা হারিয়ে ফেলছে।
অশুদ্ধবাক্য : অন্য কোন উপায়ন্ত না দেখে তারা গুলি ছুড়তে লাগল।
শুদ্ধবাক্য : অন্য কোন উপায় না দেখে তারা গুলি ছুড়তে লাগল।
অশুদ্ধবাক্য : সে ক্যান্সারজনিত কারণে মারা গিয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : সে ক্যান্সার/ক্যান্সারজনিক রোগে মারা গিয়েছে।
অশুদ্ধবাক্য : ঢাকার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
শুদ্ধবাক্য : ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
অশুদ্ধবাক্য : অনুমতি ছাড়া কারখানায় ঢুকা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
শুদ্ধবাক্য : অনুমতি ছাড়া কারখানায় ঢুকা আইনত দণ্ডনীয়/আইনত অপরাধ।
অশুদ্ধবাক্য : এত বড় মানুষ হয়েও আপনার সৌজন্যতার কমতি নাই।
শুদ্ধবাক্য : এত বড় মানুষ হয়েও আপনার সৌজন্যের/সুজনতার কমতি নাই।
অশুদ্ধবাক্য : শহীদুল্লাহ কায়সার এবং মুনীর চৌধুরী দুজনই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন।
শুদ্ধবাক্য : শহীদুল্লাহ কায়সার ও মুনীর চৌধুরী দুজনই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন।
অশুদ্ধবাক্য : আগুনের দ্বারা নিভে গেছে কতগুলো প্রাণ।
শুদ্ধবাক্য : আগুনে নিভে গেছে কতগুলো প্রাণ।
বচনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
সচেতনভাবেই হোক আর অবচেতনভাবেই হোক অনেক লেখক/কবি/সাধারণ মানুষ একটি বাক্যে দুবার বা তিনবার বহুচিহ্ন ব্যবহার করে বাক্যের গুণ নষ্ট করে। যেমন: গ্রামগুলো সব, লক্ষ লক্ষ শিশুগুলো সব, সব রাজাকারদের, সকল যুদ্ধাপরাধীদের ইত্যাদি। ‘কিছু’ ব্যবহার হলে পরে বহুবচন হয় না। যেমন: কিছু লোকদের না হয়ে হবে কিছু লোক। বচন ঘাটতি বা বাহুল্যের কারণেও বচন ভুল হতে পারে। যেমন:
অশুদ্ধবাক্য : সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
শুদ্ধবাক্য : সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর/যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
অশুদ্ধবাক্য : আইভী ছাড়া অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের অবস্থা কেমন?
শুদ্ধবাক্য : আইভী ছাড়া অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের/অন্য প্রার্থীদেদের অবস্থা কেমন?
অশুদ্ধবাক্য : এবারও আইডিয়াল স্কুলের সব ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করেছে।
শুদ্ধবাক্য : এবারও আইডিয়াল স্কুলের সব ছাত্র/ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করেছে।
অশুদ্ধবাক্য : লক্ষ লক্ষ জনতারা সব সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
শুদ্ধবাক্য : লক্ষ লক্ষ জনতা সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
অশুদ্ধবাক্য : সব পাখিরা ঘর বাঁধে না।
শুদ্ধবাক্য : সব পাখি ঘর বাঁধে না।
অশুদ্ধবাক্য : যেসব ছাত্রদের নিয়ে কথা তারা বখাটে।
শুদ্ধবাক্য : যেসব ছাত্রকে নিয়ে কথা তারা বখাটে।
অশুদ্ধবাক্য : যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের পরে বসে শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে।
শুদ্ধবাক্য : যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের পরে বসে শব্দ গঠন করে তাদের প্রত্যয় বলে।
অশুদ্ধবাক্য : আমরা এমন কিছু মানুষদের চিনি, যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
শুদ্ধবাক্য : আমরা এমন কিছু মানুষকে চিনি যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
অশুদ্ধবাক্য : ক্লাসে যে ১০ জন ছাত্র আছে তার মধ্যে ৮ জনই ভালো ছাত্র।
শুদ্ধবাক্য : ক্লাসে যে ১০ জন ছাত্র আছে তাদের মধ্যে ৮ জনই ভালো ছাত্র।
অশুদ্ধবাক্য : কিছু কিছু মানুষ আছে যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
শুদ্ধবাক্য : কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
অশুদ্ধবাক্য : সুজন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের খবর কী?
শুদ্ধবাক্য : সুজন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীর খবর কী?
অশুদ্ধবাক্য : এমন কিছু লোকদের কথা বললেন, যারা রাজাকার।
শুদ্ধবাক্য : এমন কিছু লোকের কথা বললেন, যারা রাজাকার।
অশুদ্ধবাক্য : প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
শুদ্ধবাক্য : প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
অশুদ্ধবাক্য : এটি সার্বজনীন ব্যাপার।
শুদ্ধবাক্য : এটি সর্বজনীন ব্যাপার।
অশুদ্ধবাক্য : রহিমসহ অরো অনেকেই আছেন এই নাটকে।
শুদ্ধবাক্য : রহিমসহ অনেকেই আছেন এই নাটকে।
নির্দেশকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
‘টা/টি/খানা/খানি’ ব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে ‘এই’ বা ‘ঐ’ ব্যবহার করা যাবে না। আবার গুলো বা গুলি বা গুলিন থেকে শুধু গুলো ব্যবহার করা যায়। আল্লাদিপনা বাদ দিয়ে টি’র ব্যবহার বেশি করা যেতে পারে।
অশুদ্ধবাক্য : ঐ লোকটি খুব সৎ।
শুদ্ধবাক্য : লোকটি খুব সৎ।
অশুদ্ধবাক্য : আমি এই মানুষটিকে চিনি।
শুদ্ধবাক্য : আমি এই মানুষকে চিনি। /আমি মানুষটিকে চিনি।
সন্ধির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
সন্ধি শব্দ গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম তবে সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দে সন্ধি করতে হয়। সংস্কৃত ও বাংলা শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ও বাংলা শব্দে সন্ধি না করে আলাদা লেখাই ভালো। উচ্চারণে সুবিধা করতে গিয়ে শব্দকে অশুদ্ধ করা ঠিক নয়। লেখা যায়: মিশি কালো>মিশকালো, নাতি বউ>নাতবউ, নাত জামাই> নাজ্জামাই, ঘোড়া দৌড়>ঘোড়দৌড়, পিছে মোড়া>পিছমোড়া ইত্যাদি লেখি। কিন্তু লেখা যাবে না: বচ্ছর, কুচ্ছিত, উচ্ছব, ঘোড়গাড়ি ইত্যাদি।
অশুদ্ধবাক্য : ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জাস্কর।
শুদ্ধবাক্য : ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জা কর বা লজ্জাজনক।
অশুদ্ধবাক্য : এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরাবস্থায় আছেন।
শুদ্ধবাক্য : এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরবস্থায় আছেন।
অশুদ্ধবাক্য : ইত্যাবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।
শুদ্ধবাক্য : ইত্যবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।
অশুদ্ধবাক্য : উল্লেখিত বিষয় হলো তিনি এখন সমাজসেবী।
শুদ্ধবাক্য : উল্লিখিত বিষয় হলো তিনি এখন সমাজসেবী।
অশুদ্ধবাক্য : ইতিমধ্যে আপনি বলেছেন, আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
শুদ্ধবাক্য : ইতোমধ্যে আপনি বলেছেন, আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
অশুদ্ধবাক্য : পয়লা বৈশাখ বাঙালির আসল উৎসবের দিন। (ভুলটাই শুদ্ধ)
শুদ্ধবাক্য : পয়লা বৈশাখ বাঙালির আসল উচ্ছবের দিন।
অশুদ্ধবাক্য : শরৎ চন্দ্র বাংলার বিখ্যাত কথাকার।
শুদ্ধবাক্য : শরৎচন্দ্র বাংলার বিখ্যাত কথাকার/শরচ্চন্দ্র নামে একজন প্রবন্ধকার আছে।
সমাসের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
সমাসবদ্ধ শব্দ হলে একশব্দে লিখতে হবে। অথবা মাঝে হাইফেন দিতে হবে। ও দিয়ে দুটি শব্দ যুক্ত হলে শব্দ দুটি এ-বিভক্তিযুক্ত হতে হবে। সহ অর্থ বুঝালে ‘স্ব’ না বসে ‘স’ বসে। সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সমাস হয়। সমাসজাত শব্দ ও ব্যাসবাক্য একই সঙ্গে বসে না। সমাসবদ্ধ শব্দের বানানে শুধু মাঝের ঈ-কার ই-কার হয়। যেমন :
অশুদ্ধবাক্য : ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধ ও ভাতে’, এই কথা কবি বলেছেন।
শুদ্ধবাক্য : আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ও ভাতে, এই কথা কবি বলেছেন।
/আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে, এই কথা কবি বলেছেন।
অশুদ্ধবাক্য : শহর ও গ্রামে এখন ইলেকশনের আমেজ।
শুদ্ধবাক্য : শহরে ও গ্রামে এখন ইলেকশনের আমেজ।
অশুদ্ধবাক্য : তিনি স্বসম্মানে হল ত্যাগ করলন।
শুদ্ধবাক্য : তিনি সসম্মানে হল ত্যাগ করলন।
অশুদ্ধবাক্য : কুআকারের মানুষগুলো ভালো স্বভাবেরও হয়।
শুদ্ধবাক্য : কদাকার মানুষগুলো ভালো স্বভাবেরও হয়।
অশুদ্ধবাক্য : মাল বহনকারী গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে তারা পালালো।
শুদ্ধবাক্য : মালগাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে তারা পালালো।
অশুদ্ধবাক্য : ঘি মাখা ভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
শুদ্ধবাক্য : ঘিভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
অশুদ্ধবাক্য : দুধ মাখা ভাত কাকে খায়।
শুদ্ধবাক্য : দুধভাত কাকে খায়।
অশুদ্ধবাক্য : আগে সিংহচিহ্নিত আসনে বসে রাজা দেশ চালাতেন।
শুদ্ধবাক্য : আগে সিংহাসনে বসেরাজা দেশ চালাতেন।
অশুদ্ধবাক্য : লোকটি মিশির মতো কালো হয়েও সাদা মনের মানুষ।
শুদ্ধবাক্য : লোকটি মিশকালো হয়েও সাদা মনের মানুষ।
অশুদ্ধবাক্য : তালে কানা লোককে দিয়ে কিছুই হবে না।
শুদ্ধবাক্য : তালকানা লোককে দিয়ে কিছুই হবে না।
অশুদ্ধবাক্য : ছয়টি ঋতুর সমাহারের দেশ বাংলাদেশ।
শুদ্ধবাক্য : ছয়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ।
অশুদ্ধবাক্য : রীতিকে অতিক্রম না করেও যথারীতি সে বড়লোক।
শুদ্ধবাক্য : রীতিকে অতিক্রম না করেও সে বড়লোক।
অশুদ্ধবাক্য : ক্ষণে ক্ষণে প্রতিক্ষণে মাকে পরে মনে।
শুদ্ধবাক্য : ক্ষণে ক্ষণে মাকে পরে মনে। /প্রতিক্ষণে মাকে পরে মনে।
বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
দুটি বিভক্তি না বসিয়েও কিন্তু বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকে না। ‘কে’ একাধিক কারকে ব্যবহৃত হয় বলে একে তির্যক বিভক্তি বলে। তবে যে কারকেই ব্যবহৃত হোক; এটি একবচনের বিভক্তি। বহুবচনজাতীয় শব্দে (দের) ‘কে’ বসে না। যেমন: তাদেরকে (তাদের) দিয়ে একাজ করিও না। আমাদেরকে (আমাদের) অনেক কষ্ট করে শুটিং করতে হয়েছে। সব পাগোলগুলোকে (পাগলগুলো) দিয়ে ক্লাস নেয়। এক শব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়। যেমন: তোমার কথায় বুকেতে (বুকে) আঘাত পাই। বস্তুবাচক একবচন পদে কোন বিভক্তি (কে, রে) বসে না। যেমন: ঘড়িকে (ঘরি/ঘরিটি) হাতে দাও। বইকে (বই/বইটি/ বইগুলো) পুড়িয়ে ফেলো। এই কলমটাকে (কলম) দিয়ে ভালো লেখা হয়। সংস্কৃত ভাষায় তাহাদিগকে, আমাদিগকে ব্যবহার করা হয় কিন্তু বাংলা ভাষাতে হয় না। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসে বস্তু বা প্রাণিবাচক কর্তায় ‘কে’ বসানো হচ্ছে। যেমন: বইকে পড়া—বইপড়া, গানকে শোনা—গানশোনা, সাপকে ধরা—সাপধরা, মাছকে ধরা—মাছধরা, রথকে দেখা, ভয়কে প্রাপ্ত, কাপড়কে কাঁচা, ভাতকে রাঁধা, নথকে নাড়া, স্বর্গকে প্রাপ্ত ইত্যাদি। কিন্তু আমরা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এমন ব্যবহার না করে শুধু সমাসে পড়ে থাকি।
অশুদ্ধবাক্য : ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দাও।
শুদ্ধবাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (একবচন) /ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও। (বহুবচন)
অশুদ্ধবাক্য : বইকে পুড়িয়ে ফেলো/বইগুলোকে পুড়িয়ে ফেলো।
শুদ্ধবাক্য : বই/বইটি পুড়িয়ে ফেলো (একবচন)/বইগুলো পুড়িয়ে ফেলো (বহুবচন)
অশুদ্ধবাক্য : আপনি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে কী পেলেন?
শুদ্ধবাক্য : আপনি রবীন্দ্রনাথ পড়ে কী পেলেন?
অশুদ্ধবাক্য : এ কলমকে দিয়ে কাজ হবে না।
শুদ্ধবাক্য : এ কলমে কাজ হবে না। /এ কলম দিয়ে কাজ হবে না।
অশুদ্ধবাক্য : এই কলমটিকে দিয়ে ভালো লেখা হয়।
শুদ্ধবাক্য : কলমটি দিয়ে ভালো লেখা হয়।
অশুদ্ধবাক্য : গরুকে দিয়ে শুধু লাঙল না গাড়িও টানা হয়।
শুদ্ধবাক্য : গরু দিয়ে শুধু লাঙল না গাড়িও টানা হয়।
অশুদ্ধবাক্য : সাতভাই যুক্তি করে ইউসুফ ফেলিল কুয়ায়।
শুদ্ধবাক্য : সাতভাই যুক্তি করে ইউসুফকে ফেলিল কুয়ায়।
অশুদ্ধবাক্য : তাদেরকে দিয়ে একাজ করিও না।
শুদ্ধবাক্য : তাদের দিয়ে একাজ করিও না।
অশুদ্ধবাক্য : তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই।
শুদ্ধবাক্য : তোমার কথায় বুকে আঘাত পাই।
অশুদ্ধবাক্য : গেলাসে করে দুধ দাও।
শুদ্ধবাক্য : গেলাসে দুধ দাও।
অশুদ্ধবাক্য : ঘড়িকে হাতে দাও।
শুদ্ধবাক্য : ঘড়ি হাতে দাও /ঘড়িটি হাতে দাও।
অশুদ্ধবাক্য : ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে।
/ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাদেরকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে।
শুদ্ধবাক্য : ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাদের ক্রিয়াবিভক্তি বলে।
প্রত্যয়ের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
কোন শব্দের সঙ্গে কোন প্রত্যয় যুক্ত হয় তা খেয়াল রেখেই শব্দ তৈরি করতে হয়। ভুল প্রত্যয়ের ব্যবহারের কারণে বানান ভুল হয়ে যায়। আর বানান ভুল হলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই প্রত্যয় ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হয়। একই শব্দের সঙ্গে দুটি প্রত্যয়চিহ্ন বসে না। বিভক্তি না দেয়ার কারণে যেমন বাক্যের গুণ নষ্ট হয়ে যায় আবার বেশি দিলেও গুণ নষ্ট হয়ে যায়। যেমন: এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে, তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই। তার সঙ্গে আমার সখ্যতা (সখ+য-ফলা+ তা) আছে। এটি তার দৈন্যতা।
অশুদ্ধবাক্য : এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে
শুদ্ধবাক্য : এতটুকু মেয়ে কলেজে পড়ে।
অশুদ্ধবাক্য : তবলাওয়ালা ভালোই তবলা বাজায়।
শুদ্ধবাক্য : তবলচি /তবলাবাদক ভালোই তবলা বাজায়।
অশুদ্ধবাক্য : দারিদ্র কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
শুদ্ধবাক্য : দারিদ্র্য কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
অশুদ্ধবাক্য : বিকার লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।
শুদ্ধবাক্য : বিকৃত লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।
অশুদ্ধবাক্য : এটি দল কোন্দল।
শুদ্ধবাক্য : এটি দলীয় কোন্দল।
উপসর্গের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
উপসর্গে হাইফেন বসে না। যেমন: উপ-সচিব। ‘অ’ যদি নাবোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই শব্দের শেষে হীন যুক্ত হয় না। যেমন: অসচেতনহীনভাবে, অক্লান্তিহীনভাবে।
অশুদ্ধবাক্য : ফুল দিয়ে তাঁকে সুস্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
শুদ্ধবাক্য : ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
অশুদ্ধবাক্য : শিক্ষা উপ-পরিচাল ও সহ-উপ পরিচালক আজ এই স্কুলে আসবেন।
শুদ্ধবাক্য : শিক্ষা উপপরিচালক ও সহউপপরিচালক আজ এই স্কুলে আসবেন।
অশুদ্ধবাক্য : অক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
শুদ্ধবাক্য : ক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
অশুদ্ধবাক্য : তিনি নামকরা একটি দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
শুদ্ধবাক্য : তিনি নামকরা একটি দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
চিহ্নের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
১. সংস্কৃতিতে বিশেষণ ও বিশেষ্য দুটিকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: নর—সুন্দর বালক আর নারী—সুন্দরী বালিকা কিন্তু বাংলাতে বিশেষণকে ঠিক রেখে শুধু বিশেষ্যকে নর বা নারী প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ বাংলায় বিশেষণকে নারী বাচক করার দরকার হয় না। যেমন: সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা।
২. সংস্কৃতিতে দুটি বিশেষ্যকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগলি, আসমা অস্থিরা কিন্তু বাংলাতে দুটি বিশেষ্যের একটিকে নারিচিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগল, আসমা অস্থিরা ইত্যাদি।
৩. সংস্কৃতিতে ঈ বা ইনি বা নী প্রত্যয়ই একসঙ্গে বসে কিন্তু বাংলায় বসে না। যেমন: অভাগা—অভাগী—অভাগিনী, ননদ—ননদী—ননদিনী, কাঙাল—কাঙালী—কাঙালিনী, গোয়াল—গোয়ালী—গোয়ালিনী কিন্তু বাংলায় অভাগী, ননদী, মায়াবী, কাঙালী, গোয়ালী, বাঘিনী। তবে ক্লীববাচক শব্দে নী প্রত্যয় যুক্ত করে নারী বাচক শব্দ তৈরি করতে হয়। যেমন: মেধাবিনী, দুখিনী, যোগিনী, মায়াবিনী ইত্যাদি।
৪. সংস্কৃতিতে ক্ষুদ্রার্থবাচক কিছু ক্লীববাচক শব্দকে নর বা নারী বাচক করা যায় যা বাংলাতে সঠিক নয়। যেমন: নাটক—নাটিকা, উপন্যাস—উপন্যাসিকা, পুস্তক—পুস্তিকা, গীতি—গীতিকা ইত্যাদি।
৫. সংস্কৃতিতে নরবাচক শব্দ—বৃক্ষ, নারী বাচক শব্দ—লতার ক্লীববাচক শব্দ—জল আবার হিন্দিতে নরবাচক শব্দ—রুটি আর নারী বাচক শব্দ—দই। এবার ভাবুন কত কঠিন।
৬. বাক্য দেখে নির্ণয় করতে হয় কোনটি নর আর কোনটি নারী বাচক শব্দ। যেমন: গরু গাড়ি টানে। গরু দুধ দেয়। সে/তিনি গর্ভবতী, সে কৃষিকাজ করে।
অশুদ্ধবাক্য : রহিমা খুব সুন্দরী।
শুদ্ধবাক্য : রহিমা খুব সুন্দর।
অশুদ্ধবাক্য : তার মা খুব মহান নেতা ছিলেন।
শুদ্ধবাক্য : তার মা খুব মহিয়সী নেতা ছিলেন।
অশুদ্ধবাক্য : সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখিকা।
শুদ্ধবাক্য : সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখক। /সেলিনা হোসেন একজন বিদুষী লেখিকা।
পক্ষের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
প্রথমপক্ষ যদি অন্যপক্ষের সঙ্গে একই বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাহলে ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। একশেষ হলে নিয়ম অনুসারে প্রথমে সে, তুমি ও আমি বসে আর ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। আগে কবিতার বাক্যের ক্ষেত্রে কবিগণ পক্ষ অনুসারে ক্রিয়ার ব্যবহার ঠিকরাখেন নাই। যেমন: হাসঁগুলো যায় ভাসি। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই। কারণ সংস্কৃত ‘ভাসিয়া’ থেকে ‘ভাসি’ চলিত হয়েছে।
অশুদ্ধবাক্য : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না।
শুদ্ধবাক্য : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করে না।
অশুদ্ধবাক্য : এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হবে না।
শুদ্ধবাক্য : এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হয় না।
অশুদ্ধবাক্য : আপনি বা হুজুর যদি বলেন, তাহলে (আমি) যাই।
শুদ্ধবাক্য : আপনি বা হুজুর যদি বলেন, তাহলে (আমি) যাব।
অশুদ্ধবাক্য : আমি, সে আর তুমি কাজটি করব।
শুদ্ধবাক্য : সে, তুমি আর আমি কাজটি করব।
কারকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
বস্তুর প্রাণিবাচক শব্দে ‘কে’ বসে না। ব্যক্তির নামের সঙ্গেও ‘কে’ বসে না।
অশুদ্ধবাক্য : সাপুড়ে সাপকে খেলায়।
শুদ্ধবাক্য : সাপুড়ে সাপ খেলায়।
অশুদ্ধবাক্য : পাহাড়কে নাড়ায় সাধ্য কার।
শুদ্ধবাক্য : পাহাড় নাড়ায় সাধ্য কার।
অশুদ্ধবাক্য : আপনি তো ছুরিতে মানুষ মারেন।
শুদ্ধবাক্য : আপনি তো ছুরি দিয়ে মানুষ মারেন।
অশুদ্ধবাক্য : ধর্মের কল বাতাসেতে নড়ে।
শুদ্ধবাক্য : ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
অশুদ্ধবাক্য : আপনি তো গরিবদেরকে সাহায্য করেন না।
শুদ্ধবাক্য : আপনি তো গরিবদের সাহায্য করেন না। /আপনি তো গরিবকে সাহায্য করেন না।
অশুদ্ধবাক্য : একসময় আমের কাননে মিটিং বসেছিল।
শুদ্ধবাক্য : একসময় আম্রকাননে মিটিং বসেছিল। /একসময় আমের বাগানে মিটিং বসেছিল।
বিপরীত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
সরাসরি ‘না’ শব্দটি ব্যবহার না করে বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে বাক্যের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। যেমন : দুদিন ধরে ছেলেটির কোন খোঁজ নাই। আর দুদিন ধরে ছেলেটি নিখোঁজ। সব শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগে বিপরীত শব্দ গঠন করা যায় না। অনেকেই ‘অ’ যোগে বিপরীত শব্দ তৈরি করে থাকেন। যেমন: সফলতা—অসফলতা, মূর্খ—অমূর্খ, ভালো—অভালো।
অশুদ্ধবাক্য : লোকটি কায়দায় নাই।
শুদ্ধবাক্য : লোকটি বেকায়দায় আছে।
অশুদ্ধবাক্য : লোকজন তার প্রতিকূলে নাই।
শুদ্ধবাক্য : লোকজন তার অনুকূলে নাই।
সমোচ্চারিত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
উচ্চারণের দিক থেকে এক হলেও অর্থের দিক থেকে ভিন্ন। বাক্যের অর্থ ঠিক রাখতে সমার্থক শব্দের সঠিক ব্যবহার জরুরি।
অশুদ্ধবাক্য : তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : তারা আমড়াতলায় বসে আমড়া খাওয়ার সময় মালির তাড়া খেয়েছে।
অশুদ্ধবাক্য : সে ভুড়ি ভুড়ি খেয়ে ভুরিটি বাড়িয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : সে ভুরি ভুরি খেয়ে ভুঁড়িটি বাড়িয়েছে।
শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
বিভিন্ন প্রকার শব্দ বা পদ দুবার ব্যবহার করে শব্দ বানাতে পারি। কিন্তু অর্থের দিকে খেয়াল করতে হয়। যেমন: ফলাফল শব্দটি ঠিক ব্যবহার কিন্তু এর প্রতিশব্দ হিসেবে লেখা হয় ফলশ্রুতিতে’ তাহলে শব্দটি হবে ভুল। কারণ ‘ফলশ্রুতি’ অর্থ ‘শ্রবণ’ কোন বিষয়ের ফল নয়। ‘ভাষাভাষী’ অর্থ কোন একটি ভাষা ব্যবহারকারী। তাই ভাষাভাষীর পূর্বে কোন ভাষার নাম উল্লেখ করে লিখলে তা হবে ভুল। যেমন: বাংলা ভাষাভাষী। এমন কিছু দ্বিত্বশব্দ তৈরি করা হয় যা ভুল। যেমন: ভেদাভেদ, গুণাগুণ ইত্যাদি। এদের মধ্যে ভালোমন্দ দুটিই থাকে। যেমন: ভেদ+অভেদ বা গুণ+অগুণ। এদের অপপ্রয়োগ আজ প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘ভেদাভেদ ভুলে গেছে’ যা ভুল। আবার বলা হচ্ছে ‘আমাদের পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা সচেতন’।
শব্দদ্বিত্ব কোন সময় একবচন আবার কোন সময় বহুবচন প্রকাশ পায়। এরা আলাদা বসে আবার হাইফেনযুক্ত হয়ে বা একশব্দেও বসতে পারে। তাই বাক্যে ব্যবহারের সময় এদিকটি খেয়াল রাখতে হয়।
অশুদ্ধবাক্য : ঘামজলে তার শার্ট ভিজে গেছে।
শুদ্ধবাক্য : ঘামে তার শার্ট ভিজে গেছে।
অশুদ্ধবাক্য : অশ্রুজলে তার কপল ভিজে গেছে।
শুদ্ধবাক্য : অশ্রুতে তার কপল ভিজে গেছে।
অশুদ্ধবাক্য : ঘরটি ছিমছিমে অন্ধকার।
শুদ্ধবাক্য : ঘরটি ঘুটঘুটে অন্ধকার।
বাক্যের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
বিভিন্ন নিয়ম অর্থাৎ সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয় ইত্যাদি দিয়ে শব্দ বানানো যায়। কিন্তু এই বানানো শব্দ পাশাপাশি বসালেই বাক্য হয় না। কিছু গঠন অনুসরণ করেই একটি সার্থক বাক্য তৈরি করা যায়। সার্থক বাক্যে গুণরক্ষা করে বাক্য বানাতে হয়। বাক্যের অর্থ ঠিক না থাকলে বাক্য গুণহীন হয়ে যায়। আবার যতির ভুল ব্যবহারের কারণেও বাক্যের অর্থের হেরফের হয়ে যায়।
অশুদ্ধবাক্য : পরবর্তীতে আপনি আসবেন।
শুদ্ধবাক্য : পরবর্তিকালে /পরবর্তী সময়ে আপনি আসবেন।
অশুদ্ধবাক্য : সকল দৈন্যতা দূর হয়ে যাক।
শুদ্ধবাক্য : সকল দৈন্য দূর হয়ে যাক। সকল দীনতা দূর হয়ে যাক।
অশুদ্ধবাক্য : সেখানে গেলে তুমি অপমান হবে।
শুদ্ধবাক্য : সেখানে গেলে তুমি অপমানিত হবে।
অশুদ্ধবাক্য : আমি অপমান হয়েছি।
শুদ্ধবাক্য : আমি অপমানিত হয়েছি।
অশুদ্ধবাক্য : সূর্য উদয় হয়নি।
শুদ্ধবাক্য : সূর্য উদিত হয়নি।
অশুদ্ধবাক্য : সত্য প্রমাণ হোক।
শুদ্ধবাক্য : সত্য প্রমাণিত হোক।
অশুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্যতা নাই।
শুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্য/মধুরতা নাই।
অশুদ্ধবাক্য : রাধা দেখতে খুব সুন্দরী ছিল।
শুদ্ধবাক্য : রাধা দেখতে খুব সুন্দর ছিল।
অশুদ্ধবাক্য : এটি অপক্ক হাতের কাজ।
শুদ্ধবাক্য : এটি অপটু হাতের কাজ।
অশুদ্ধবাক্য : স্বল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
শুদ্ধবাক্য : অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
অশুদ্ধবাক্য : অভাবে চরিত্র নষ্ট।
শুদ্ধবাক্য : অভাবে স্বভাব নষ্ট।
অশুদ্ধবাক্য : বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
শুদ্ধবাক্য : বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
অশুদ্ধবাক্য : অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য হলেন।
শুদ্ধবাক্য : অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।
অশুদ্ধবাক্য : সৎ চরিত্রবান লোক সবার কাছে প্রিয়।
শুদ্ধবাক্য : চরিত্রবান লোক সবার কাছে প্রিয়।
অশুদ্ধবাক্য : মাতাহীন শিশুর অনেক দুঃখ।
শুদ্ধবাক্য : মাতৃহীন শিশুর অনেক দুঃখ।
অশুদ্ধবাক্য : শে ভাগ্যবতী মহিলা।
শুদ্ধবাক্য : শে ভাগ্যবতী।
অশুদ্ধবাক্য : মিলাদে গোলাপজলের পানি ছিটাও।
শুদ্ধবাক্য : মিলাদে গোলাপজল ছিটাও।
অশুদ্ধবাক্য : বইটি তার জরুরি প্রয়োজন।
শুদ্ধবাক্য : বইটি তার (খুব) প্রয়োজন।
অশুদ্ধবাক্য : সবাই বাবা-মার সুস্বাস্থ্য কামনা করে।
শুদ্ধবাক্য : সবাই বাবা-মার সুস্থতা কামনা করে।
অশুদ্ধবাক্য : ছেলেটি শুধুমাত্র /কেবলমাত্র ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।
শুদ্ধবাক্য : ছেলেটি শুধু /মাত্র /কেবল ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।
অশুদ্ধবাক্য : ৫ বছর সময়কাল ধরে তারা জনগনকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
শুদ্ধবাক্য : ৫ বছর ধরে তারা জনগনকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
অশুদ্ধবাক্য : ভারত ব্রিটিশদের অধীনস্থ ছিল বলেই তারা যুদ্ধ করেছিল।
শুদ্ধবাক্য : ভারত ব্রিটিশদের অধীনে ছিল বলেই তারা যুদ্ধ করেছিল।
অশুদ্ধবাক্য : আপনারাই প্রথম তাদেরকে সুস্বাগতম জানালেন।
শুদ্ধবাক্য : আপনারাই প্রথম তাদের স্বাগত জানালেন।
Download From Google Drive
Download
Download From Yandex
Download
👀 প্রয়োজনীয় মূর্হুতে 🔍খুঁজে পেতে শেয়ার করে রাখুন.! আপনার প্রিয় মানুষটিকে “send as message”এর মাধ্যমে শেয়ার করুন। হয়তো এই গুলো তার অনেক কাজে লাগবে এবং উপকারে আসবে।